স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিকাঙ্গণে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন এবং আলোচিত এমপি শামীম ওসমানের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, এই আসনে জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে শামীম ওসমানের সখ্যতা বেশ পুরনো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমান সোনারগাঁয়ে গিয়ে প্রকাশ্যেই লিয়াকত হোসেন খোকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন। একই নির্বাচনে শামীম ওসমানের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল কায়সার হাসনাতের। একে অপরের বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্যও করেছিলেন প্রকাশ্যে। তবে সময়ের ব্যবধানে সেই অতীত ও বর্তমানের দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। শামীম ওসমান তার ডাকা সমাবেশ সফল করতে সোনারগাঁয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে প্রস্তুতি সভা করেছেন। অতঃপর কায়সার হাসনাতও নেতাকর্মীর বহর নিয়ে শামীম ওসমানের সমাবেশে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে যোগদান করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, লিয়াকত হোসেন খোকা নাকি কায়সার হাসনাত; কোন দিকে থাকবে শামীম ওসমানের অবস্থান?
জানা গেছে, এমপি শামীম ওসমানের নির্বাচনি এলাকা ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ। আক্ষরিক অর্থে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি। তবে নিজ নির্বাচনি অঞ্চলের গণ্ডি পেড়িয়ে প্রভাব-প্রতিপত্তির ডালপালা ছড়িয়েছেন পাশর্^বর্তী দু’টি আসনে। বিশেষ করে, সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আধিপত্য ধরে রাখতে নানা প্রচেষ্টা চালাতে দেখা যায় শামীম ওসমানকে। আসনটির বর্তমান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ জন। ২০১৪ সালের ন্যায় ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মহাজোট থেকে প্রার্থী হন লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে দেখা যায়, নিজ নির্বাচনি অঞ্চলের প্রচারণার পাশাপাশি তিনি সোনারগাঁয়ে গিয়ে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার জন্য ভোট চেয়েছেন, জনসভা করেছেন এমনকি গণসংযোগও করেছিলেন।
একই নির্বাচনে সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। সেবার কায়সারকে আটকাতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন শামীম ওসমান। এ নিয়ে শামীম ওসমান ও কায়সার হাসনাতের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। পরবর্তী সময়ে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে কায়সার হাসনাত নানা বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন।
স্থানীয় রাজনীতিবীদরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য সেই কায়সার হাসনাত এবার রাখঢাক না রেখে শামীম ওসমানের সাথে সম্পর্ক গড়তে শুরু করেছেন। এমনকি শামীম ওসমানের এক ডাকেই তিনি সোনারগাঁ থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শহরের জনসভায় এসেছেন। বিগত কয়েক মাস ধরে শামীম ওসমানের প্রসংশা করতে গিয়ে কায়সার হাসনাত এ-ও বলছেন যে, ‘শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের ব্রান্ড।’
অন্যদিকে, এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে শামীম ওসমানের সম্পর্ক সেই ছাত্রজীবন থেকেই। শামীম ওসমানের নেতৃত্বে লিয়াকত হোসেন খোকা শুরুতে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। এছাড়াও শামীম ওসমানের বড় ভাই প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিও ছিলেন লিয়াকত হোসেন খোকা। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক অনেকটা পারিবারিক বটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা এবং আওয়ামী লীগের কায়সার হাসনাত উভয়ে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক মধুর নয়। এরই মাঝে শামীম ওসমান দু’জনের সাথেই সু-সম্পর্ক বিদ্যমান রেখেছেন। ফলে শামীম ওসমানের অবস্থান নিয়ে সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মাঝে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল মনে করেন, শামীম ওসমান তার নিজ স্বার্থের জন্যই কায়সার হাসনাতকে ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে ১৬ সেপ্টেম্বরের একটি স্বার্থ তিনি হাসিলও করে ফেলেছেন কায়সার হাসনাতের কাছ থেকে। নৌকা পাবার আশায় কায়সার হাসনাতও শামীম ওসমানের উড়ানো ঘুড়ির ন্যায় দুলতে শুরু করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান কায়সার হাসনাত নয় বরং তার ঘনিষ্ঠ লিয়াকত হোসেন খোকার জন্যই নাটাই ঘোরাবেন বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল।